সোমপুর মহাবিহার(পাহাড়পুর বিহার, বদলগাছী, নওগাঁ, বাংলাদেশ) সম্পর্কে উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া এবং ইন্টারনেট ঘেটে এই লেখাটা লিখেছি। যদি তথ্যের কোন ভুল বা অজানা কিছু থাকে তাহলে কমেন্টে জানানোর অনুরোধ করছি।
- সোমপুর বিহার একটি জৈন বিহার ছিল। এই জৈন বিহারের উপর পরবর্তীকালে ধর্মপাল কর্তৃক সোমপুর মহাবিহার প্রতিষ্ঠিত হয়।
- পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল ছিলেন এই বিহারের মুল নির্মাতা। তবে তিব্বতীয় ইতিহাস মতে ধর্মপালের পুত্র রাজা দেবপাল এই বিহারের মুল মন্দির নির্মান সহ পরিপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ করে বিহারকে পরিপূর্ণতা দান করেন। পরবর্তীতে চার শতকে তিনবার বিহারটির অবকাঠামো সংস্কার করা হয়।
- সোমপুর বৌদ্ধ বিহার দক্ষিণ হিমালয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার। আয়তনে এর সাথে ভারতের নালন্দা মহাবিহারের সাথে তুলনা করা হয়।
- প্রায় ২৭ একর জায়গা জুড়ে বিহারটি বিস্তৃত। এতে রয়েছে ১৭৭ টি কক্ষ। মুল মন্দিরের উচ্চতা ৩০ মিটার। যা বর্তমানে মাটির নিচে দেবে গিয়ে ২১ মিটার।
- পাল রাজাদের আমলে পাঁচটি মহাবিহার প্রতিষ্ঠিত হয় তার মধ্যে দুটি হলো বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার সোমপুর বিহার এবং রাজশাহী জেলার জগদ্দল বিহার। বাকি তিনটি হলো ভারতের বিহার রাজ্যের বিক্রমশীলা(পৃথিবীর প্রাচীনতম মহাবিদ্যালয়), নালন্দা(পৃথিবীর প্রথম আবাসিক মহাবিদ্যালয়) এবং ওদান্তপুর। পাঁচটি বিহারই পাল রাজাদের তত্ত্বাবধানে ছিল এবং বিহারগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ ছিল। পাল সাম্রাজ্যের অধীনে প্রতিষ্ঠিত বিহার গুলো একত্রে একটিমাত্র নেটওয়ার্ক হিসেবে বিবেচিত হতো। মহাবিহারগুলোর পণ্ডিতেরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে পারতেন এবং বিখ্যাত পণ্ডিতদের মধ্যে এই বিহারগুলোতে পদবীর ভিত্তিতে স্থানান্তরিত হওয়া সাধারণ ব্যাপার ছিল।
- তিব্বত গমনের আগে দশম শতকে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান ছিলেন বিক্রমশীলা ও সোমপুর বিহারের আচার্য। সোমপুর বিহারে অবস্থানকালেই অতীশ দীপঙ্কর মধ্যমকরত্নপ্রদীপ গ্রন্থের অনুবাদ করেন।
- ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও সুদূর চীন, তিব্বত, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধরা ধর্মচর্চা ও ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে সোমপুর বিহারে আসতেন।
- প্রায় আটশ বছর আগে পাল রাজাদের পতন শুরু হওয়ার পর বাংলায় ক্ষীয়মাণ বৌদ্ধ শাসন, হিন্দুপ্রধান সেনবংশের উত্থান এবং তাদের হারিয়ে ১৩শ শতাব্দীর শুরুতে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজীর বাংলায় আক্রমণ এবং তাদের মূর্তিবিরোধী মনোভাবের ফলে বৌদ্ধদের এই বিহার ও মন্দিরগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।
- ছয়’শ বছর স্মৃতির অতলে হারিয়ে থাকার পর পুনরায় এর হদিস মেলে ইংরেজ আমলে ভূমি জরিপে ১৮০৭-১৮১২ সালের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে।
- বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যার আলেকজান্ডার ক্যানিমহাম ১৮৭৯ সালের দিকে সোমপুর বিহারের খনন কাজ শুরু করেন। কিন্তু তৎকালীন জমির মালিক বলিহারের জমিদার তাঁকে এই কাজে বাধা দেন। পরবর্তীতে ব্রিটিশ ভারতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে সোমপুর বিহারকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসাবে ঘোষণা করে আংশিক খনন কাজ চালায়। ১৯২০ থেকে ১৯৩৪ সালের মধ্যে আরও কয়েকবার আংশিক খননকাজ চলে। অবশেষে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৮০’র দশকে এর খনন কাজ পুরোদমে শুরু হয়।
- ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো বাংলাদেশের তিনটি স্থানকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বা বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে। তার মধ্যে সোমপুর বিহার একটি এবং বাকি দুটো হলো বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ এবং সুন্দরবন।
তথ্য সুত্র: উইকিপিডিয়া