বিন্দু সম্পাদক কবি সাম্য রাইয়ানের জীবনে আন্তনগর প্রেমে চেপে প্রেম না এলেও প্রেম এসেছে তার কবিতার প্রতিটি পংক্তিতে। সাম্য রাইয়ানের নির্বাচিত কিছু প্রেমের কবিতা আর্কাইভে সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে হিজিবিজি। এছাড়াও সমকালীন কবিদের কবিতা পড়তে সাম্য রাইয়ান সম্পাদিত লিটল ম্যাগাজিন ‘বিন্দু’ পড়তে পারেন। ঘাসফুল থেকে সংগ্রহ করতে পারেন কবি সাম্য রাইয়ানের সকল বইপুস্তক।
হিজিবিজির বিশেষ আয়োজন ‘নির্বাচিত প্রেমের কবিতা’য় আজ থাকছে সাম্য রাইয়ানের একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা৷
সাম্য রাইয়ানের প্রেমের কবিতা – ১: আত্মজীবনী
অর্ধেক জীবন গেল
তোমার দিকে চেয়ে,
বাকি অর্ধেক
তোমার কথা ভেবে।
সাম্য রাইয়ানের প্রেমের কবিতা – ২: হামিংবার্ডের উৎসর্গ
সোনামুখী সুঁই থেকে তুমি
চুঁইয়ে পড় সুতো হয়ে
নিচেই বিদ্ধ আমি
সেলাই হই তোমার সুতোয়!
সাম্য রাইয়ানের প্রেমের কবিতা – ৩: শিকার
প্রার্থনায় শিকার করো প্রিয়তম হরিণীকে;
তার ভেতরে বইছে অনন্ত ঝরণাধারা!
সাম্য রাইয়ানের প্রেমের কবিতা – ৪: হামিংবার্ড
চোখের ভেতরে
একটা হামিং বার্ড
নিয়ে বসে আছি
চমকে দিও না তাথৈ
উড়ে যাবে…
উড়ে যাবে তারা– স্বপ্নেরা;
সারি সারি ডানা
ঘুমের ভেতরে বয়ে চলা নদী
হাতের তালুতে বয়ে যাবে
ঢোঁরা সাপ, রক্তের ধারা।
সাম্য রাইয়ানের প্রেমের কবিতা – ৫: নাম
অনেকটা প্রেমের গভীরে থাকি
অনেকটা ঝড়ের গতিতে থাকি
নামের ভেতরে থাকে সমূহ সম্ভাবনা,
ছায়ার আড়ালে হাসে
চিত্রকল্পের বাঘ।
তলিয়ে যাচ্ছি চোখে, ওহ হামিংবার্ড!
নিজেকে অচেনা লাগে, অপর থেকেও;
অধিক যাপনে, নামের গোপনে।
সাম্য রাইয়ানের প্রেমের কবিতা – ৬: তোমার দিকে, মধ্যরাতে
১.
আমার উঠোন কেঁপে ওঠে
তোমার চুলের দোলায়…
২.
তোমাকে পাঠ করতেই দ্যাখো, কীভাবে
প্রতিটি লোমে লেগে যাচ্ছে রঙের চিহ্ন!
৩.
গহীনে ঢেলেছি যত বেদনার ভার
তুমি আমায় উপশম দাও।
৪.
তোমার ঐ কালো টিপের সাথে
আমায় আর আটকে রেখো না;
টিপের আঠায়
আমিও হচ্ছি আঠালো
জড়িয়ে যাচ্ছি ক্রমশ।
৫.
যতটা জানানো যায়
তার অধিক, জেনেছ সকলই।
পালক বদল করে, অন্যরকম
তুমিও বদল হও
বাতি নেভানোর পরে।
৬.
রোড পারমিট আছে
সিগন্যাল দেখছি, সবুজ বাতি
জ্বলছে; তবুও যাচ্ছি না।
সাম্য রাইয়ানের প্রেমের কবিতা – ৭: বানানবিভ্রাট
এতো যে জোনাকি-আলো, পথ দেখায় না, আশা জাগায় না; ব্যথা ভোগায় না; কিছুই…
আমি শুধু জন্মকে মৃত্যুর প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে ভালোবাসি। প্রতিবার জন্মের ত্রুটি নিয়ে এত যে প্রবণ-মাঝি! তোমার জন্য লাগে আমার কব্জি-জোরের থেকে বেশি, পুরোনো ক্রোধের সুরে গর্জন। কেন প্রায়শ গোলাপের নামে প্রতারণা মুদ্রণ করো! শীতার্ত ভয়ে কেঁপে ওঠা, দুলদুল এই পাতাগুলো অসহায়, কপর্দক ছুঁতে পারছে না। সোডিয়াম বাতি থেকে মিনতিমিনার অব্দি, ভাসে অনঙ্গ বাতাস শুধু বাদামের পাতা থেকে যথার্থ মনীষা জাগাতে। আমার ঈশ্বর তুমি, ভেতরে সবুজাভ পাট; অথচ আশ্চর্য, তোমারই হৃদয়ে ঘটে বানানবিভ্রাট!
সাম্য রাইয়ানের প্রেমের কবিতা – ৮: বসন্তের সনেট
অহেতুক বসন্তের রোদ—অসময়ে ঝড়
বিরক্ত শিশুর কান্না… এরকম টুকরো-টাকরা
শীত-মিশ্রিত সময়ের প্রবচন!
তোমার চুলের ভাঁজে
এক তোড়া সনেট গুঁজে দাও
মরা নদী ভাষা ফিরে পাবে।
সাম্য রাইয়ানের প্রেমের কবিতা – ৯: ভ্রমণ বিষয়ক
প্রথমে জঙ্গলে যেতে চেয়েছিলাম
ক্রমান্বয়ে পাহাড় আর সমুদ্রে।
জঙ্গলে গেলে না তুমি
পোকামাকড়ের ভয়!
তাহলে সমুদ্রেই চলো; পাহাড়ে
গণ্ডগোল খুব, বিষাক্ত সেনাদল আর
নিরাসক্ত প্রাণীদের ক্যাম্প।
সাম্য রাইয়ানের প্রেমের কবিতা-১০: স্ববৈকুণ্ঠ
বদলে যাচ্ছো। জলবায়ু ঠেলে রোজ
অগ্রসর হচ্ছি তোমার দিকে।
সমস্ত দিনের ভ্রান্তি ভেঙে রাত্রির উষ্ণতা
ছিল জ্যোতিষ্মান, অতিসঙ্গত কাল্পনিক।
তবু অপরাধীদের সংকল্প আমার মধ্যে
ব্রাহ্মক্ষণে উচ্ছল চরিত্রের উদাসীনতা।
শিশু সওদাগর, আশাহীন মানুষ আর
তোমার মিষ্টিকণ্ঠ মোবাইলে লিখে রাখলাম।
জলধ্যানে জেগে ওঠা মনোরম ছবি
অন্তহীন প্রেমে স্বধর্মে প্রতিষ্ঠিত।
হালের কারুকার্য দেখে সতর্ক হয়েছি খুব
যৌক্তিক দেহে তবু বিষাদের শৌখিন অনুপ্রবেশ
যতই জীবন্ত হোক কাষ্ঠখণ্ড-আগ্নেয়গিরি
মৈত্রীভাবনা ছুঁড়ে, রক্তাক্ত অভিজ্ঞতার দিকে
আমি তো যেতেই চাই, হৃদয় মানে না।
সাম্য রাইয়ানের প্রেমের কবিতা – ১১: রাত্রির অলৌকিক জলাধার
দুর্বোধ্য প্রেমের একপাশে তুমি
বিপরীতে অলৌকিক জলাধার।
স্বচ্ছ। নীল আলোর নিঃশ্বাস।
প্রজ্বলিত অগণন আহ্বান ঠেলে
নিজেকে বিভ্রান্ত করে যায়।
প্রভূত আলোর থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে
হতাশার কাঠ খড়ে আগুন দিয়েছি।
অবসন্ন রাত্রির কলার চেপে ধরি— ‘আপনি কে?’
— আমি ঐ দূরে
পাহাড়চূড়ার আড়াল থেকে
হেঁটে বেরিয়েছি রোজকার মতো
— এসেছ তাহলে তুমি
উড়ুক্কু অন্ধকার, অধিক স্পষ্ট হবার আগে
অর্থময় দীর্ঘকাল পেরিয়ে, মৌ মৌ চিৎকারে
নিয়ে চলো অক্ষরগুলি, শাস্ত্ররেখা বরাবর!
সাম্য রাইয়ানের প্রেমের কবিতা পড়ে আমি মুগ্ধ । শুধু কবিতায় নয়
তার জীবনেও প্রেম আসুক যুগে যুগে বহুবার।