প্রিয় পাঠক, শুভেচ্ছা জানবেন। আবেদন পত্র লেখার নিয়ম বা দরখাস্ত লেখার নিয়ম শীর্ষক ব্লগে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। যদিও ছোটবেলায় আমরা বিভিন্ন প্রয়োজনে দরখাস্ত লিখেছি, তারপরেও আমাদের মধ্যে অনেকেরই দরখাস্ত লিখতে, বিশেষ করে চাকরির দরখাস্ত লিখতে সমস্যা হয়। লজ্জার কারণে আমরা এসব কাজে অন্যদের সাহায্যও নিতে চাই না। ফলে দরখাস্ত ভালো করাও হয় না। এই সমস্যাটা নিরসনের জন্য হিজিবিজি ব্লগার টিমের এই ব্লগটি। আশা করি ব্লগটি পড়ে আপনি আবেদন পত্র লেখার নিয়ম ভালোভাবেই জানতে পারবেন। এছাড়াও প্রতিবেদন লেখার নিয়ম , দিনলিপি লেখার নিয়ম বা অন্য যেকোন বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে আমাদের অন্যান্য ব্লগ পড়তে পারেন।
আবেদন পত্র বা দরখাস্ত কি?
দরখাস্ত লেখার নিয়ম জানার আগে আমাদের জানতে হবে এই দরখাস্ত বা আবেদন পত্র কি? এটা খায় নাকি মাথায় দেয়? স্কুলে বাংলা পরীক্ষায় এই আবেদন পত্র বা দরখাস্ত লেখার সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। মূলত আবেদন পত্র বা দরখাস্ত হলো একটি চিঠি বা পত্র, যা কোন বিষয়ে অনুরোধ করে লেখা হয়। সহজ ভাষায় একেই আমরা দরখাস্ত বা আবেদন পত্র বলতে পারি। এখন চলুন আবেদন পত্র লেখার নিয়ম জেনে নেই।
আবেদন পত্র লেখার নিয়ম
দরখাস্ত লেখার নিয়ম বা ফরমেট ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। কেউ অফিসের প্রয়োজনে দরখাস্ত লেখে, কেউ আবার চাকরির জন্য আবেদন পত্র লেখে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা দরখাস্ত লেখে তাদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রয়োজনে। যদিও কাজের প্রেক্ষাপটভেদে আবেদন পত্র বা দরখাস্ত আলাদা হয়ে থাকে, কিন্তু বেসিক দরখাস্ত লেখার নিয়ম একই হয়ে থাকে সবক্ষেত্রেই। আপনি যদি দরখাস্ত লেখার নিয়ম এর সেই বেসিক রুলগুলো মনে রাখতে পারেন, তবে আশা করা যায় আপনার দরখাস্ত লেখার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে না। আপনাদের সুবিদার্থে আমরা দরখাস্ত লেখার নিয়ম ছবি সহ লিখেছি।
আবেদন পত্রের বেসিক উপাদান সমূহ
- তারিখ: দরখাস্ত লেখার সময় সর্বপ্রথম যে জিনিসটা লিখতে, তা হলো তারিখ। দরখাস্তে তারিখের গুরুত্ব অনেক বেশি, এবং একই সাথে সঠিক তারিখ লিখতে হবে। নইলে দরখাস্তটি কর্তৃপক্ষের নিকট গ্রহণযোগ্য বলে হবে না। (উদাহরণ: ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪ বা ২৬শে জানুয়ারি, ২০২৪ এরকম ফর্মেটে তারিখ লেখা যেতে পারে।)
- প্রাপক: এই অংশে যার নিকট দরখাস্ত লেখা হচ্ছে তার পদ-পদবী লিখতে হয়, এবং তার সাথে তার ঠিকানা দিতে হয়। উদাহরণ: প্রধান শিক্ষক, ডিএম একাডেমী, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম; অধ্যক্ষ, রংপুর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ, রংপুর; মেয়র, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম; জেলা প্রশাসক, রাজশাহী ইত্যাদি।
- বিষয়: দরখাস্তের এই অংশে আপনি কিসের জন্য বা কি আবেদনের জন্য পত্রটি লিখছেন, সেটি এক লাইনে উপস্থাপন করবেন। উদাহরণ: “সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য ভেন্যু বরাদ্দ প্রসঙ্গে”।
- সম্বোধন সূচক শব্দ: মূলত এর পর থেকেই দরখাস্ত শুরু হয়। আমাদের প্রচলিত সিস্টেমে আমরা দরখাস্তের মেইন বডির আগে যার কাছে আবেদন করছি তাকে সম্মানসুচক সম্বোধন করে লিখে থাকি। উদাহরণ: জনাব, মহোদয়, হুজুর ইত্যাদি।
- বডি: দরখাস্তের এই অংশে মূল বিষয় লেখা হয়। এখানে অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় কথা না লেখাই শ্রেয়। অল্প শব্দে, কম কথায় দরখাস্তের মূল বিষয়বস্তু তুলে আনাই এই অংশের কাজ। এখানকার শব্দগুলো মার্জিত ও গোছালো হতে হয়, এবং অপ্রয়োজনীয় কথা পরিহার্য।
- আবেদনকারীর পরিচয় ও ঠিকানা: আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা এই অংশে উল্লেখ্য করতে হয়। এটাই দরখাস্তের সর্বশেষ অংশ।
- সংযুক্তি: দরখাস্তের সাথে সংযুক্ত করার মতো কোনো কাগজপত্র থাকলে সেটিকে দরখাস্তের শেষাংশে উল্লেখ করতে হয়। “সংযুক্তি” শিরোনামের নিচে এখানে সেই সকল কাগজের নাম লেখা হয় যা যা দরখাস্তের সাথে যুক্ত করা হয়েছে।
এই পয়েন্টগুলো একটি দরখাস্ত লেখার নিয়ম এর মৌলিক অংশটুকু আপনি বুঝেছেন আশা করছি। এতোটুকু আপনার জানা থাকলেই যেকোন দরখাস্ত আপনি খুব সহজেই লিখে ফেলতে পারবেন।
দরখাস্ত লেখার নিয়ম ছবি সহ
ছবি দিয়ে সহজে বুঝা যায় বিধায় আপনারা অনেকেই দরখাস্ত লেখার নিয়ম ছবি সহ খুঁজে থাকেন। তাদের কথা বিবেচনা করেই আমরা দরখাস্ত লেখার নিয়ম ছবি সহ সাজিয়েছি। নিচে দরখাস্ত লেখার নিয়ম ছবি সহ দেখানো হলো।
উপরে দরখাস্ত লেখার নিয়ম ছবি সহ দেখানো হয়েছে।
দরখাস্ত লেখার নিয়ম / আবেদন পত্র লেখার
১. চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম | চাকরির আবেদন পত্র লেখার নিয়ম বাংলা
আমাদের সমাজে চাকরি জীবনের শুরুর আগে, চাকরির জন্য প্রায় সকলেরই দরখাস্ত লিখতে হয়। দরখাস্ত ছাড়া চাকরির আবেদন কল্পনাও করা যায় না। চাকরির জন্য লেখা দরখাস্তকে অবশ্যই মার্জিত হতে হবে। এবং সেখানে বর্ণনা করতে হবে কেন উক্ত পদে কর্তৃপক্ষ আপনাকে নিয়োগ দিবে, আপনাকে নিয়োগ দিলে তাদের কি কি সুবিধা হতে পারে ইত্যাদি। চলুন জেনে নেয়া যাক চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম বা চাকরির আবেদন পত্র লেখার নিয়ম বাংলা। সত্যি কথা বলতে গেলে চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম সাধারণ দরখাস্ত লেখার নিয়ম প্রায় একই। মানে সাধারণ দরখাস্ত লেখার নিয়ম এবং চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম বা চাকরির আবেদন পত্র লেখার নিয়ম বাংলা -এর মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই।
চাকরির আবেদন পত্র লেখার সময় আমরা সবথেকে বেশি ঘাব্ড়ে যাই। চাকরির আবেদন পত্র অনেক সেন্সিটিভ হওয়ায়, চাকরির আবেদন পত্র লেখার সময় আমাদের চিন্তার শেষ থাকে না। নিচে স্কুল শিক্ষক পরে চাকরির আবেদন পত্র কিভাবে লিখতে হয় তা দেখানো হলো।
তারিখ: ১৫/১১/২০১৯ ইং
বরাবর,
পরিচালক,
এন.এস. আমিন রেসিডেন্সিয়াল স্কুল
উলিপুর, কুড়িগ্রাম।
বিষয়: সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন।
জনাব,
সবিনয় বিনীত নিবেদন এই যে, গত ২৪ নভেম্বর ’হিজিবিজি’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, আপনার প্রতিষ্ঠানে ৪ জন “সহকারী শিক্ষক” পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। আমি আপনার প্রতিষ্ঠানের “সহকারী শিক্ষক” পদের একজন প্রার্থী হিসেবে চাকরির জন্য আবেদন করতে ইচ্ছুক। নিম্নে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী আপনার সদয় বিবেচনার জন্য পেশ করলাম।
প্রার্থীর নাম:
পিতার নাম:
মাতার নাম:
বর্তমান ঠিকানা:
স্থায়ী ঠিকানা:
মোবাইল নাম্বার:
ই-মেইল:
জন্ম তারিখ:
জাতীয়তা:
ধর্ম:
ব্লাড গ্রুপ:
শিক্ষাগত যোগ্যতা:
পরীক্ষার নাম | গ্রুপ/বিষয় | বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয় | পাশের সন | প্রাপ্ত গ্রেড |
এসএসসি | বিজ্ঞান | দিনাজপুর | ২০১২ | জিপিএ-৫ |
এইচএসসি | বিজ্ঞান | দিনাজপুর | ২০১৪ | জিপিএ-৫ |
বিএসএস | রাষ্ট্রবিজ্ঞান | জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় | ২০১৮ | প্রথম শ্রেণী |
এমএসএস | রাষ্ট্রবিজ্ঞান | জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় | ২০১৯ | প্রথম শ্রেণী |
অভিজ্ঞতা:
১। ………………………
২। ……………………..
অতএব, মহোদয় সমীপে বিনীত প্রার্থনা আমার উল্লেখিত তথ্যাবলী বিবেচনা পূর্বক আমাকে উক্ত পদে নিয়োগ দানে আপনার মর্জি হয়।
সংযুক্তি:
ছবি ২ কপি
একডেমিক সকল সনদপত্রের সত্যায়ি কপি
চারিত্রিক সনদপত্র
নাগরিকত্ব সনদপত্র
আরো পড়ুন: প্রতিবেদন লেখার নিয়ম, নমুনা ও কৌশল 2024
২. ছুটির জন্য আবেদন পত্র : অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন পত্র
ছুটির জন্য আবেদন পত্র বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবথেকে বেশি যেটা প্রয়োজন হয়, সেটা হলো অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন পত্র । মূলত স্কুলে গিয়ে অসুস্থ অনুভব করলে অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন পত্র লেখা হয়। নিচে অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন পত্র -এর একটি নমুনা দেয়া হলো।
তারিখ-০৪/০২/২০২৪
বরাবর
প্রধান শিক্ষক
রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
রংপুর।
বিষয়: অসুস্থতার জন্য ছুটি চেয়ে আবেদন।
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আফিয়া আঞ্জুম, আপনার বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর একজন নিয়মিত ছাত্রী। স্কুলে আসার পরে আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ অনুভব করছি। আমার পক্ষে আজকের ক্লাসগুলো করা আর সম্ভব না।
অতএব, জনাবের নিকট আমার বিনীত নিবেদন এই যে, আমার অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে ছুটি প্রদান করে বাধিত করবেন।
বিনীত নিবেদক
আফিয়া আঞ্জুম
শ্রেণী-নবম
বিভাগ-বিজ্ঞান
রোল নং-০৫
৩. পুলিশের কাছে জিডি বা সাধারণ ডায়েরী করার জন্য আবেদন পত্র
তারিখ: ……./……./………
বরাবর
অফিস ইনচার্জ
লালমনিরহাট সদর থানা (থানার নাম), লালমনিরহাট সদর (উপজেলার নাম), লালমনিরহাট (জেলার নাম)
বিষয়: সাধারণ ডায়েরীর জন্য আবেদন।
জনাব,
যথাবিহীত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সবিনয় বিনীত নিবেদন এই যে, আমি মোঃ/মোছাঃ ………………………. (আপনার নাম লিখুন), পিতা/স্বামী: মোঃ ………………….. (আপনার পিতা অথবা স্বামীর নাম লিখবেন), গ্রাম: ………….(আপনার গ্রামের নাম লিখুন), ডাকঘর:……………, উপজেলা:………………., জেলা:……………..। আমি শারীরিকভাবে থানায় হাজির হয়ে এই মর্মে লিখিতভাবে জানাচ্ছি যে, গত ……/……/২০২৩ ইং তারিখে আমার দোকান হতে বাড়িতে আসার পথে আমার ন্যাশনাল আইডি কার্ডটি হারিয়ে ফেলেছি। আমার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার ৮২৫……………..। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করার পরও না পেয়ে আমি চিন্তিত হয়ে পরেছি। এমতাবস্থায় বিষয়টি সাধারণ ডায়েরীর অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
অতএব, উপরোক্ত বিষয়টি বিবেচনা করে সাধারণ ডায়েরীভুক্ত করে কৃতজ্ঞতায় বাধিত করবেন।
নিবেদক
(স্বাক্ষর)
(আপনার পূর্ণ নাম)
মোবাইল নাম্বার: +৮৮০১৭…………
ঠিকানা: ……………….
আবেদন পত্র লেখার নিয়ম বাংলা | দরখাস্ত লেখার নিয়ম: FAQ
মূলত আবেদন পত্র বা দরখাস্ত হলো একটি চিঠি বা পত্র, যা কোন বিষয়ে অনুরোধ করে লেখা হয়।
তারিখ, প্রাপক, বিষয়, সম্বোধন সূচক শব্দ, বডি, আবেদন কারীর পরিচয় ও সংযুক্তি
নির্ভরযোগ্য ব্লগ: প্রোবাংলা
নির্ভরযোগ্য ব্লগ: বাংলাদি
যখন আবেদনপত্র কম্পোজ করব, তখন বিষয় কি বোল্ড করে লেখা বাধ্যতা মূলক?
আসলে এটা অপশনাল। করলেও সমস্যা নেই, না করলেও সমস্যা নেই। করলে দেখতে সুন্দর লাগে, তাই বোল্ড করা হয়।