১৭ নভেম্বর ১৫২৫, মুঘল সম্রাট বাবর তার সেনাবাহিনী নিয়ে সিন্ধু প্রদেশের মধ্য দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। তিনি অগ্রসর হচ্ছিলেন ভারতের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত পাঞ্জাব অঞ্চলের দিকে।
বাবর ছিলেন একজন দক্ষ সেনাপতি এবং তিনি তার সেনাবাহিনীকে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করতে জানতেন। তার সেনাবাহিনীতে ছিল প্রশিক্ষিত এবং যুদ্ধে অভিজ্ঞ তুর্কি, মুঘল, পারসি এবং আফগান সৈন্য।
১৫২৬ সালের ২১ এপ্রিল, বাবর পাঞ্জাবের পন্না নদীর তীরে ইব্রাহিম লোদির নেতৃত্বাধীন লোদি সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধে জয়লাভ করে তিনি ভারতের উত্তর-পশ্চিমের প্রদেশগুলোর অধিপত্য অর্জন করেন।
বাবরের এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা হয়। মুঘল সাম্রাজ্য পরবর্তী তিন শতাব্দী ধরে ভারত শাসন করে।
বাবরের ভারত বিজয়ের কারণ
বাবর ভারত বিজয়ের পিছনে বেশ কিছু কারণ ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- বাবরের সামরিক শক্তি: বাবর ছিলেন একজন দক্ষ সেনাপতি এবং তার সেনাবাহিনী ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। তার সেনাবাহিনীতে ছিল তুর্কি, মুঘল, পারসি এবং আফগান সৈন্য। তারা ছিল অত্যন্ত প্রশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ যোদ্ধা।
- ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা: ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা তখন অত্যন্ত অস্থিতিশীল ছিল। দিল্লী সালতানাত তখন ভেঙে পড়েছিল এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট ছোট রাজ্যগুলি নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার জন্য লড়াইয়ে জড়িয়ে পরেছিল। যার কারণে বাবর ভারতে তার সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ পান।
- বাবরের ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা: বাবর ছিলেন একজন সম্প্রসারণবাদী শাসক। তিনি ভারতের উত্তর-পশ্চিমের অঞ্চলগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে চেয়েছিলেন।
- বাবরের ভাগ্য: বাবরের বিজয়ের জন্য ভাগ্যেরও কিছুটা ভূমিকা ছিল। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদির সেনাবাহিনী ছিল বাবরের সেনাবাহিনী থেকে অনেক বড়। কিন্তু যুদ্ধের শুরুতেই ইব্রাহিম লোদির ঘোড়া মারা যাওয়ায় তিনি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যান। এতে লোদি সেনাবাহিনী বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে এবং বাবরের সেনাবাহিনী তাদের পরাজিত করতে সক্ষম হয়।
বাবরের ভারত বিজয়ের ফলাফল
বাবর ভারত বিজয়ের মাধ্যমে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা করেন। মুঘল সাম্রাজ্য পরবর্তী তিন শতাব্দী ধরে ভারত শাসন করে। এই সময়কালে মুঘল সাম্রাজ্য ভারতের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
বাবর ভারত বিজয়ের মাধ্যমে ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা ঘটান। তার এই বিজয় ভারতের শাসনব্যবস্থা এবং সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলে।