ektu-valobasa

একটু ভালোবাসা | নুসরাত জান্নাত

লীনা তার বিয়ের পর পরই অদ্ভুত এক সমস্যায় পরে গেলো। বিয়ে হয়েছে আজ ১৩ দিন। তবু কাউকে একথা বলতে পারে নি সে। বেশ ছটফট আর অস্বস্তি লাগে তার ঐ সময়টা। সজল বার কয়েক তাকে জিজ্ঞেস করেছে কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা। প্রতিবারই সে উত্তর দিয়েছে, ‘না’।

লীনার শ্বাশুড়ি ও শ্বশুর অসম্ভব ভালো মনের মানুষ। তবুও তার বলতে কেমন জানি সংকোচ হচ্ছে। বেশ বনেদি পরিবারে বিয়ে হয়েছে তার। বললে কী যে মনে করবে এরা!

সন্ধ্যায় বিভিন্ন জলখাবার তৈরি হয় এ বাড়িতে। লীনাদের বাড়িতে এসবের চল ছিলো না। এখানে সিংগাড়া, ডালপুরি, পেঁয়াজু, নুডলস, ছোলাবুট, আলুর চপ, লুচি, পায়েস আরো কী কী যেনো হরদম তৈরি হয়। অনেক খাবার এর নামই জানে না সে। এখান থেকে যেকোন একটা নাস্তা আর ঘন দুধ দিয়ে কড়া লিকারের এক কাপ চা- ব্যস, হয়ে গেলো সন্ধ্যার খাবার।

সন্ধ্যার এই সময়টা আসলেই শুরু হয়ে যায় তার ছটফটানি। না পারছে কাউকে বোঝাতে, না পারছে মুখ ফুটে বলতে। অদ্ভুত একটা অভ্যাস আছে তার। সে আসলে সন্ধ্যায় নাস্তা খায় না, সে খায় ভাত। সাদা ভাত!

তাদের বাড়িতে দুপুরে যা খাবার তৈরি হতো তা থেকে কিছু অংশ সন্ধ্যার জন্য রেখে দিতো তার মা। ইশ! অমৃত মনে হতো তার! লীনা মোট ৪ বেলা ভাত খেতো। এই বাড়িতে এসে দুইবেলা ভাত খাওয়া হয়। সকালে এখানে রুটি-সব্জি-ডিম খায় সবাই। সকাল টা নিয়ে তার কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হয় সন্ধ্যা বেলায়।

আজ সন্ধ্যার আগে সজলকে একবার বলতে চেয়েছিলো সে কিন্তু বলি বলি করেও আর বলা হয়ে উঠলো না। সন্ধ্যার নাস্তায় গোটা দুয়েক আলুর চপ মুখে পুরে দিতে চেয়েও আর দিলো না। চায়ের মগটা হাতে নিয়ে তার বেডরুমের সাথে লাগোয়া ব্যালকনিতে চলে গেলো সে। মন খারাপ ভাব নিয়ে চায়ের মগে চুমুক দেয় আর আকাশের কোটি কোটি তারার দিকে চেয়ে সখ্যতা বাড়াতে থাকে। তার মনের গোপন কথা গুলো বুঝি বলতে থাকে নীরবতার মাঝে!

আচমকা তার কাঁধে এক মধ্যবয়স্ক হাতের ছোঁয়া পায়। পেছনে তাকিয়ে দেখে তার শ্বাশুড়ি। কেমন যেনো মায়া মায়া চোখে তার দিকে চেয়ে আছে। লীনা কুণ্ঠিত কণ্ঠে বললো, “মা, আপনি!”

“কি রে, নাস্তা না করে শুধু চা নিয়ে উঠে এলি? ভালো লাগছে না বুঝি?” – আদর করে একমাত্র পুত্রবধূকে উনি তুই করে বলেন।

“না, মানে মা, এমনি একটু ব্যালকনিতে আসলাম। আপনি উঠে এলেন যে!

লীনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

“তোর জন্য ভাত টেবিলে রেখে আসছি। খাবি না?”

লীনার চোখে প্রায় জল আসার উপক্রম হলো। সে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,

” মা, আপনি জানলেন কীভাবে? “

উনি হেসে উত্তর দিলেন,

” মা দেরকে সব কিছু জানতে হয় রে। আজ সকালে তোর মাকে ফোন করে তোর প্রিয় খাবার, প্রিয় ড্রেস, প্রিয় রঙ, মোট কথা তোর যা যা ভালো লাগে সব জেনে নিয়েছিলাম। আমি আমার একটা মাত্র ছেলের বউ এর মন খারাপ ভাব, অস্থিরতা, চোখে মুখে উদ্বিগ্নতা দেখতে পারবো না। জানিস, লীনা, আমি যখন এ বাড়ির বউ হয়ে আসি আমারও চোখে অনেক স্বপ্ন ছিলো। সে স্বপ্ন আমার শ্বাশুড়ি কখনো ফিকে হতে দেন নি। আমিও দিবো না। তুই আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অংশ। কী করে তোর মন খারাপ হতে দেই, বল তো?”

মা! গভীর আবেগে লীনা তার শ্বাশুড়ি কে জড়িয়ে ধরলো।

কিছুক্ষণ পর দুইজন হাত ধরাধরি করে ডাইনিং রুমে এসে দেখতে পেলো, সজল ও তার বাবা খুব আরামে বসে চা খাচ্ছে আর লুডু খেলছে।

তাদেরকে দেখেই লীনার শ্বশুর জোরে বলে উঠলো,

“লীনা তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। জোড়া জোড়া লুডু খেলবো। বাজি ধরে খেলবো। যারা হারবে তারা আগামীকাল রান্না করবে। হা হা হা!”

লীনা খুব খুশি হয়ে হাত ধুয়ে টেবিলে এসে দেখে তার জন্য ঢাকা রয়েছে বাসমতী চালের সাদা ভাত, ইলিশ মাছ ভাজা ২ পিস, আর ২ পিস বেগুন ভাজা।

অনেক দিন পর প্রিয় খাবার টেবিলে দেখতে পেয়ে জিভে জলের পাশাপাশি আরো একবার চোখে জল এলো তার। লীনার শ্বাশুড়ি শুধু বললেন, “যা লাগবে, মুখ ফুটে বলবি।”

সৃষ্টিকর্তার কাছে লীনা মনে মনে বললো, তার শ্বশুর- শ্বাশুড়ি এতো বেশি ভালো কেনো!

নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করলো সে, এই পরিবারকে সে কোনদিন কষ্ট পেতে দিবে না। ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখবে সবসময়, আজীবন।

(বি.দ্রঃ গল্পটা কাল্পনিক। প্রতিদিন কত শত খবর পড়ি, আশেপাশের ঘটনা দেখি যেখানে বউ- শ্বাশুড়ি যুদ্ধ, পরকীয়া, যৌতুকের কারণে নির্যাতন, খুন, আত্মহত্যার মতো কুকর্ম গুলো সংঘটিত হয়। গল্পটা লিখার উদ্দেশ্য হলো যদি এমন হতো তবে কেমন হতো! ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সবার মধ্যে আসুক- এই প্রার্থনা করি। )

Share this article
0
Share
Shareable URL
Prev Post

দায়িত্ব | নুসরাত জান্নাত

Next Post

আনন্দ বেদনার কাব্য | নুসরাত জান্নাত | বুক রিভিউ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next
0
Share