প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ১০ জানুয়ারী, ১৯২০ সালে লীগ অফ ন্যাশনস প্রতিষ্ঠিত হলেও এর প্রথম সভা বসে ১৫ নভেম্বর, জেনেভায়। ট্রিটি অফ ভার্সাই (Treaty of Versailles) বা ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই অর্গানাইজেশনের মূল লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক শান্তি নিশ্চিত করা ও ভবিষ্যৎ সংঘাত প্রতিরোধ করা।
সেনাবাহিনীতে অস্ত্রের লিমিট নির্ধারণ, আগ্রাসন প্রতিরোধ, কুটনীতি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার মাধ্যমে বিরোধ সমাধান সহ লীগ অফ ন্যাশনসের অনেকগুলো অবজেক্টিভ ছিল। মজার ব্যপার, লীগ অফ ন্যাশনস গঠনের চুক্তিটি একটি শান্তিচুক্তি হিসেবে অবতির্ণ হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটায়।
লীগ অফ ন্যাশনসের একটি এসেম্বলী ছিল, যেখানে সকল সদস্য রাষ্ট্রের একজন প্রতিনীধি ছিল এবং স্থায়ী (যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান ও জার্মানি) ও অস্থায়ী সদস্যদের নিয়ে গঠিত ছিল এর সাধারণ সভা। সেক্রেটারিয়েট বা সচিবালয় এর কার্যক্রম পরিচালনা করত।
লীগ অফ ন্যাশনসের মহৎ উদ্দেশ্য থাকলেও একে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি লীগকে দুর্বল করে দিয়েছিল অনেকটা। তার উপর, সদস্য রাষ্ট্রগুলো আন্তর্জাতিক শান্তি নিশ্চিত করার পরিবর্তে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার চেষ্টায় মত্ত ছিল।
লীগ অফ ন্যাশনস কিছু ভালো কাজও করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ছোট-ছোট দেশগুলোর মধ্যে বিরোধ সমাধান করা। সামাজিক কাজ পরিচালনাকে সহজতর করেছে। দাসপ্রথা চিরোতরে উৎখাতে ভুমিকা রেখেছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ভুমিকা রেখেছে।
দুঃখের বিষয় ১৯৩০-এর দশকে সামরিকবাদ ও আগ্রাসনের উত্থান ঠেকাতে ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে লীগ পতনের দিকে যাত্রা শুরু করে। ১৯৩১ সালে জাপানের মাঞ্চুরিয়া আক্রমন এবং ১৯৩৫ সালে ইথিওপিয়ায় ইতালীর আক্রমণ লীগকে বিশ্বের সামনে হাস্যকর করে তোলে এবং এর ব্যর্থতাগুলো সকলের সামনে আসে।
১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ (UN or United Nations) প্রতিষ্ঠার পর ২০ এপ্রিল, ১৯৪৬ সালে লীগ অফ ন্যাশনস আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। জাতিসংঘের নির্মাতারা লীগের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষাগ্রহন করেছিল। এই শিক্ষাই জাতিসংঘকে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বিরোধ নিষ্পত্তিতে শক্তিশালী করে তোলে।
সূত্রঃ উইকিপিডিয়া