এরকম বহু কঠিন সংগা শাস্ত্রীয় সংগীতে থেকে থাকতে পারে,”গীত এক ধরনের শ্রবণযোগ্য কলা যা সুসংবদ্ধ শব্দ ও নৈশব্দের সমন্বয়ে মানব চিত্তে বিনোদন সৃষ্টি করতে সক্ষম।” তবে সোজা ভাষায় আমি সংগীত বলতে যা বুঝি, তা হলো মানুষের সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, জীবনদর্শন, এক কথায় সব অকৃত্রিম অনূভুতি গুলো কে সুর, তাল ও লয়ের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা।
সময় এবং জায়গাগুলির মধ্যে বিস্তর পরিবর্তিত, সংগীত অতীত এবং বর্তমান প্রতিটি পরিচিত সংস্কৃতিতে পাওয়া যায়। যেহেতু সর্বাধিক বিচ্ছিন্ন উপজাতি গোষ্ঠী সহ বিশ্বের সমস্ত লোকের একধরনের সংগীত রয়েছে, তাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে যে বিশ্বজুড়ে মানব বিচ্ছুরণের আগে পৈতৃক জনগোষ্ঠীতে সংগীত উপস্থিত ছিল। ফলস্বরূপ, প্রথম সংগীত আফ্রিকায় উদ্ভাবিত হতে পারে এবং পরে মানব জীবনের একটি মৌলিক উপাদান হয়ে উঠেছে।
একটি সংস্কৃতির সংগীত সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সংস্থা এবং অভিজ্ঞতা, জলবায়ু এবং প্রযুক্তিতে অ্যাক্সেস সহ সেই সংস্কৃতির অন্যান্য সমস্ত দিক দ্বারা প্রভাবিত হয়। সংগীত যে অনুভূতি এবং ধারণা প্রকাশ করে, যে পরিস্থিতিতে সংগীত বাজানো হয় এবং শোনা যায় এবং সংগীত প্লেয়ার এবং সুরকারদের প্রতি মনোভাবগুলি অঞ্চল এবং কালগুলির মধ্যে পৃথক হয়। “সংগীতের ইতিহাস” হল সংগীতবিদ্যা এবং ইতিহাসের স্বতন্ত্র সাবফিল্ড যা কালানুক্রমিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংগীত (বিশেষত পশ্চিমা শিল্প সংগীত) অধ্যয়ন করে।
বর্তমান যুগকে এমন একটি যুগ বলা যেতে পারে যেখানে সংগীত শোনার উপায় নমনীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষত জাপানে, পাশ্চাত্য এবং জাপানি সংগীত জেনারগুলির মতো জনপ্রিয় ধরণের সংগীত, জনপ্রিয় সংগীত, লোক সংগীত, জাজ, জনপ্রিয় সংগীত ইত্যাদি পাশাপাশি পাশাপাশি সাজানো হয় এবং আপনি যদি বাণিজ্যিক গান এবং পটভূমি সংগীতও গণনা করেন তবে সংগীতটির একটি রয়েছে বিশাল বিস্তার। এই পরিস্থিতিটি সমস্ত ধরণের সংগীতের দ্বার উন্মুক্ত করেছিলো, বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গণযোগাযোগের বিকাশের সাথে সাথে এবং অডিও সরঞ্জামগুলির বিকাশের সাথে রেকর্ডিং এবং প্লেব্যাক এবং প্রজননের বিস্তৃত সম্ভাবনার। নতুন পরিস্থিতি নিজেই বাদ্যযন্ত্রের ধারণার রূপান্তর ও প্রসারণকে উত্সাহিত করেছিল। তবে অতীতের পরিস্থিতি ছিল আলাদা। জাপানে মেইজি আমলের আগে, উদাহরণস্বরূপ, গাগাকু মন্দির এবং পাবলিক ক্লাসের অন্তর্ভুক্ত ছিল, নোহ সামুরাই শ্রেণীর, নাগাটো এবং জোরুরি শহরবাসীর অন্তর্ভুক্ত ছিল, এবং সংগীতের প্রতিটি ঘরানাই স্বতন্ত্রভাবে এবং সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের মধ্যে বন্ধ ছিল।
সঙ্গীতের আরো পেছনের দিকে তাকালে, ইতিহাসবেত্তাদের মতে, পাথরযুগের মানুষও সঙ্গীত গাইতো। সম্ভবত প্রথম সঙ্গীত তৈরির চেষ্টা হয়েছিল শব্দ ও ছন্দ দ্বারা প্রকৃতির সাহায্যে।
বাংলার সঙ্গীতের ইতিহাসকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:
- ১. গ্রাম বাংলার সঙ্গীত
- ২. কলকাতা শহরের গান
গ্রাম বাংলার সঙ্গীত :
এ ধরণের সঙ্গীতের কোনো লিখিত সনদ না থাকলেও জনপ্রিয়তার কোনো কমতি ছিলো না। এমনকি আজও কোনো কোনো কমতি নেই। জারি, সারি, ভাটিয়ালি… এই গানগুলোর সুর ও কথা গ্রামবাংলার খাঁটি রূপকে লালন করে। এছাড়া কীর্তন, বাউল, ঝুমুর গান, টুসু গান এগুলোও বেশ জনপ্রিয় ছিলো আগেকার গ্রামবাসীদের মধ্যে। এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় গ্রামে এ গানগুলোর চর্চা বেশ কমেছে।
কলকাতা শহরের গান:
মূলত ভারতীয় সঙ্গীতের সাথে (বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ) বাংলাদেশের সঙ্গীতের অনেক মিল আছে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কেননা এপার বাংলা ও ওপার বাংলার আঞ্চলিক সংযোগ ও ভাষার মিল সবাইকে একটি সাংস্কৃতিক বন্ধনে বেঁধে রেখেছে। রবীন্দ্রসঙ্গীত,ও নজরুল সঙ্গীত দুই বাংলাতেই সমান ভাবে জনপ্রিয়। এছাড়াও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতেল ক্ষেত্রে দুই বাংলার সাধকদের চর্চায় বেশ মিল লক্ষ্যণীয়। ঔপনিবেশিক আমলে কলকাতা শহরের পত্তন হলে শহরের নিজস্ব গান এবং সংস্কৃতি গড়ে উঠতে থাকে।
বাংলার আধুনিক গানের উদ্ভব:
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে বাংলার আধুনিক গানের উদ্ভব ঘটতে থাকে। এই সময় রবীন্দ্রসঙ্গীত, দ্বিজেন্দ্রগীতি ও নজরুলগীতি বাংলা গানের জগতে বিপ্লব রচনা করেন। রবীন্দ্র যুগের পর বাংলা আধুনিক গানের জগতে বাংলা ছায়াছবি বা চলচিত্রের গান বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো।
বাংলাদেশের জাতিয়তাবাদে সঙ্গীতের ভূমিকা :
” আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি “, “আমি বাংলায় গান গাই” – গানগুলি ১৯৫২ সালের ভাষাশহীদ দের আত্মত্যাগকে হৃদয়স্পর্শী সুরের স্রোতে উপস্থাপনা করে। ” মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি “, ” মাগো ভাবনা কেন” এরকম বহু গানের সুর একাত্তরের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলো। বাঙালি জাতিয়তাবাদের বিকাশে এ গানগুলোর ভূমিকা অনন্য।
অতীত হোক বা বর্তমান, হাজার বছর থেকে সঙ্গীত সাধক ও শ্রোতাদের হৃদয়ে সঙ্গীত বাস করে আসছে। পুরাতনের হাত ধরেই নতুনের জন্ম হয়। তবে ভবিষ্যতে সঙ্গীতে যত নতুনত্বই আসুক না কেন, পুরাতন যুগের মৌলিক সুরগুলো সবসময়ই শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রাণ হিসেবে গন্য হবে।